New Post!
ওলীআল্লাহদের প্রয়োজন ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসের আলোকে।
ওলীআল্লাহ্র দের সাথে আল্লাহ্ ও তার রসূলদের খুব ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে থাকে। কেননা যতক্ষণ আল্লাহ্র হুকুম ও তার রসূল (সঃ) সুন্নাতের উপর পুরপুরি আমল না করবে সে মুমিন হতে পারেনা। আর যতক্ষণ সে মুমিন কামেল হবে সে ওলীআল্লাহ্ হতে পারেনা।
ওলীআল্লাহদের প্রয়োজন ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসের আলোকে।
হজরত দাতা গঞ্জে বখ্শ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পুরো নাম শাইখ সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী হাজবিরী । কিন্তু সাধারণভাবে তিনি ‘গঞ্জে বখশ’ ও ‘দাতা গঞ্জে বখ্শ' নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন । তিনি ৪০০ হিজরিতে গজনি শহরের সন্নিকটে হাজবীর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাইয়্যেদ উসমান জালাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) । গজনির নিকটবর্তী অন্য একটি গ্রামের নাম জালাব, যেখানে হজরত সাইয়্যেদ উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বসবাস করতেন । হজরত আলী হাজবিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হজরত ইমাম হাসান (রা)-এর বংশধর ছিলেন ।
হজরত আলী হাজবিরী তৎকালীন জগদ্বিখ্যাত ওলামা ও মাশায়েখের কাছ থেকে ইলমে শরীয়াত ও মারিফাত শিক্ষা লাভ করেছেন । তাঁর উস্তাদগণের মধ্য হতে হজরত শাইখ আবুল আব্বাস আশকানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), শাইখ আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনুল মিসবাহ সঈদলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), শাইখ আবুল কাসিম আবদুল করীম ইবনে হাওয়াযিন আল-কুশাইরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), শাইখ আবুল কাসিম ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ আল-গুরগানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী আল-মারাফ দাস্তানী বুস্তামী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), আবু সাঈদ ফাজলুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ মুহাইনী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং আবূ আহমদ মুজাফ্ফর ইবনে আহমদ ইবনে হামদান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ।
মারেফাতের দীক্ষা
হজরত শাইখ আবুল ফজল মুহাম্মদ ইবনে হাসান খাত্তালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর ইলমে মারেফাতে মুরশিদ ছিলেন। স্বীয় মুরশিদের জীবন কাহিনি বর্ণনা করে হজরত আলী হাজবিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তিনি তাফসীর, হাদীস ও তাসাউফ তিনটি বিষয়েই অভিজ্ঞ ছিলেন। তাসাউফ-এ তিনি হজরত জুনাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসারী ও হজরত শাইখ হাজরামী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মুরিদ ছিলেন। ষাট বছর অবধি তিনি জনসমাজ থেকে দূরে পাহাড়ে ইবাদতের মধ্যে নিমগ্ন ছিলেন। একবার আমি তাঁকে উজু করার সময় তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম, তখন আমার মনে এ খেয়াল উদয় হয় যে, আমি একটি স্বাধীন লোক, তবে কেন আমি একজন গোলামের ন্যায় তাঁর পায়ে পানি ঢেলে দিব? এ সময় আমার পীর মুরশিদ বললেন, প্রিয় বৎস! তোমার মনে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, তা জানি । তবে জেনে রেখ যে, কোন কাজের সফলতার জন্য একটি মাধ্যম প্রয়োজন হয়। এ খেদমত মানুষের বুযর্গীর কারণ হয়ে যেতে পারে। এটাও খেয়াল রেখ যে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন তবে একজন সিপাহীর পুত্রকেও বাদশাহীর মুকুট দান করতে সক্ষম।
আধ্যাত্মিক ও রূহানী শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে হজরত আলী হাজবিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সিরিয়া, ইরাক, পারস্য, কোহিস্তান, আজারবাইজান, তিবরিস্তান, খুজিস্তান, কিরমান, খোরাসান, তুর্কিস্থান এবং অন্যান্য বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন । এ সমস্ত দেশের অনেক বুযুর্গের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁদের খেদমতে থেকে রূহানী দীক্ষা হাসিল করেছেন। খোরাসানেই তিনি তিনশ মাশায়েখের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, আমি খোরাসানে এরূপ তিনশ বুযুর্গ দেখেছি, যাঁদের একজনই দুনিয়ার মানুষের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট ।
হজরত আলী হাজবিরী বলেছেন: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে সর্ব অবস্থায় ইলমে শরীয়তের অনুসারী হতে হবে। কারণ, সুলতানে ইলম সুলতানের হালের উপর জয়ী এবং তার থেকে উত্তম হয়ে থাকে । তিনি চল্লিশ বছর ক্রমাগত বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। তথাপি কখনও জামায়াতে নামায আদায় করা ত্যাগ করেননি এবং প্রত্যেক জুমুআর নামাযের দিন কোন শহরে অবস্থান করতেন। যখন জনসমাজে আসতেন, সাধারণ মানুষের মতো চলতেন । সুফিদের বাহ্যিক আচার-আচারণ থেকে তিনি স্বীয় মুরর্শিদের ন্যায় দূরে থাকতেন ।
বেসাল মোবারাক
হজরত আলী হাজবিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) স্বীয় মুরশিদের নির্দেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে সুলতান মাহমুদ গজনির পুত্র নাসিরুদ্দীন মাসউদের শাসন আমলে ১০৩০-১০৪০খ্রি: মোতাবেক ৪২১-৪৩২ হি: লাহোর আগমন করেন। এর পূর্বে তাঁর পীরভাই হোসাইন যানজানী এই কাজে নিযুক্ত ছিলেন । এজন্য যখন তাঁকে লাহোর গমনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তিনি স্বীয় মুর্শিদের কাছে আরজ করলেন যে, সেখানে হোসাইন যানজানী অবস্থান করছেন । সুতরাং সেখানে আমার যাওয়ার কী প্রয়োজন রয়েছে? তাঁর শায়েখ বললেন, না, তোমাকে সেখানে যেতে হবে। হজরত আলী হাজবিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি রাতে লাহোের পৌঁছি এবং ভোরে দেখতে পেলাম যে, হোসাইন যানজানীর জানাযা শহর থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেছেন । তবে লাহোরই ছিল তাঁর প্রধান কেন্দ্র ।
অবশেষে ৪৬৫ হিজরিতে তিনি লাহোরেই বেসাল প্রাপ্ত হন এবং এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়-
إِنَّ لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ -
নাসিরুদ্দীন মাসউদের পুত্র জহিরুদ্দৌলাহ তাঁর মাজার তৈরি করেন এবং তাঁর খানকাহ বাদশাহ জালালুদ্দীন আকবর (১৫৫৫-১৬০৫ খ্রি: মোতাবেক ৯৬৩-১০১৪হি:) নির্মাণ করেন। খাজা মুঈনউদ্দীন চিশতী আজমিরি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং খাজা ফরিদউদ্দীন গঞ্জে শকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফয়েজ ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর মাজারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছেন ।
হজরত খাজা মুঈনউদ্দীন চিশতী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) চিল্লা শেষে রওয়ানা হওয়ার কালে এই কবিতা আবৃত্তি করেন-
گنج بخش فیض عالم مظهر نور خدا
ناقصان را پیر کامل کاملان را رهنما
নামকরণ
হজরত দাতা গঞ্জে বখ্শ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: “আমি এই কিতাবের নাম কাশফুল মাহজুব এই জন্য রেখেছি যে, যাতে গ্রন্থের নামে এর বিষয়বস্তু পাঠকবৃন্দ অনুধাবন করতে পারেন। বিশেষ করে, যেহেতু এই কিতাব আল্লাহর পথের বর্ণনা এবং মানুষের সামনের আল্লাহপ্রাপ্তির অন্তরায় রূপ পর্দা দূর করার উদ্দেশ্যে রচনা করা হয়েছে, এ কারণে এ গ্রন্থের নাম কাশফুল মাহজুব রাখা হয়েছে।”
আবুল হাসান আলী দাতা গাঞ্জে বাখশ হাজবেরী। data ganj bakhsh
প্রথম হুজুর কেবলা হজরত মাওলানা সূফী মূফতী আজানগাছী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ও উপাধিঃ
হজরত মাওলানা সূফী মূফতী আজানগাছী ফারুকী (রহঃ) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার অন্তর্গত আজানগাছী গ্রামে ১২৩৮ হিজরি মুতাবিক ১৮২৮ ইং ও বাংলা ১২৩৫ সালে জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু তাঁর তাঁর পিতা হজরত মাওলানা শেখ রকিবুদ্দিন ফারুকী (রহঃ), যিনি হজরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী সিরহিন্দ (রহঃ)এর পিতা হজরত শেখ আব্দুল অহাদ এর ভাই হজরত শেখ আব্দুস সামাদ ফারুকী (রহঃ) এর বংশ পরম্পরা ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) সাথে মেলে, এবং হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) হজরত ওমর (রাঃ) এর ৩৭তম বংশধর। হজরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ) এর মৃত্যু ১০৩৪ হিজরি মুতাবিক ১৬২৪ ইং তে এবং হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) এর জন্ম ১২৩৮ হিজরি মুতাবিক ১৮২৮ইং। রেফেরেন্সের জন্য ‘মজমুয়ে হালাত ও মাকামাতে আলফেসানী’ কিতাব টি একনজর দেখে নাও। এই দুই মহামানবের জন্মের মধ্যে ২০৪ সালের পার্থক্য। এবং এই দুই শতাব্দীতে হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) এর পূর্বপুরুষদের মধ্যে সম্ভাবত ৮-৯ জন বুজুর্গ পর্দা নিয়েছিলেন। হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) এর পূর্ব পুরুষেরা পশ্চিম পাঞ্জাবের সিরহিন্দ শরীফ থেকে হিজরত করে পশ্চিম বঙ্গের হাওড়া জেলার অন্তর্গত আজানগাছী গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। এবং ওখানকার বাসস্থান গ্রহন করেন। তাঁর বংশধরের মধ্য থেকে একজন বুজুর্গ একটি গাছে উঠে আজান দিয়েছিলেন, ওই আজান যতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছিল ওই এলাকার নাম আজানগাছী রেখেছিলেন। এই নামে বর্ণিত মাওলানা তিনি নিজের নাম গোপন করে তাঁর গ্রামের নামে খ্যাত লাভ করেন।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় আমাদের দাদাপীর আলে ফতেমা বংশে ফারুকী মীর পীরজাদা খাদেম দরগাহ ও দরবারে মদিনা মুনাওয়ারা, হাক্কানী রব্বানী কিবলা ও কাবা জাহানী ও জামানী সূফী মুফতী রকিবুদ্দিন আহমদ ফারুকী সাহেব (রহঃ) হজরত ফারুক শাহ শাহাবুদ্দিন অলী মোয়াজ উদ্দিন মহাম্মাদ ঘোরী (রহঃ) এর বংশতে মেলে। তার পরের বুজুর্গ সারা দেশ ও বাংলায় এবং অনেক জায়গায় ইসলামের ভীত কায়েম করে।
শিক্ষা গ্রহন-
হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) পণ্ডিত ও তাকওয়ার সাথে সাথে ধনী ও জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালা প্রথম থেকেই তাঁর বংশে সায়াদাত ও শারাফাত, তাকওয়া তাহারাত অর্জনকারী বানিয়েছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নিজ পরিবার থেকেই শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে কলকাতা আলিয়া মাদ্রসাতে ভর্তি করে দেন। আলিয়া মাদ্রাসা লর্ড ব্যরোন ইষ্ট ইন্ডিজ ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন, সেখানে দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষার তালীম দেওয়া হত। ওখানে থেকে তিনি ইলমিয়াত, ফজিলত, দাওরায়ে হাদীস, মুমতাজুল মহাদ্দেসীন ও মমতাজুল ফোকাহর পরিক্ষা পাস করে ডিগ্রি হাসিল করেছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তিবাদী বিজ্ঞান, পরিবহন বিজ্ঞানের সাথে সাথে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন। আজকের দিনে ওই আলিয়া মাদ্রাসা নামকরন করে “আলিয়া ইউনিভার্সিটি” করা হয়েছে।
ইলমের এক পর্যায় অর্জন করার পর অন্য পর্যায় ইলমে বাতেনী অর্থাৎ রুহানিয়তের জ্ঞান অর্জনের দিকে এতটা আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন, তাঁকে অনেক মুশকিলের সাথে অনেক দূরের সফর করতে হয়েছিল। তাঁর পিতা তাঁকে ইলমে মারেফতের জ্ঞান অর্জনের জন্য তাঁকে প্রথম সিলসিলাহ কাদেরীয়া তরীকার বুজুর্গ ও ওলীয়ে কামেল হজরত মাওলানা শাহ সূফী মুফতী খুদা বক্স (খন্দকর) কাদেরী বাগদাদী (রহঃ) পশ্চিমবঙ্গের মেদনীপুর জেলার পিয়ার ডাঙ্গার কাছে বায়াত গ্রহন করেন। সম্ভবত ২ বছর কঠিন মেহনত, রিয়াজাত, মুজাহিদা, মুরাকাবার সাথে পূর্ণ আমল করে মুর্শিদের ফায়েজ, খিরকাহ্ ও খিলাফাত হাসিল করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাঁর মন ভরেনি যার কারনে তিনি আরও আগে বাড়তে চেয়েছিলেন, ঠিক তখনই পীর ও মুর্শিদের হুকুম হল যে তুমি বাড়ি ফিরে যাও। বর্ণিত মাওলানা ইচ্ছাপ্রশুত আদবের ভাবে জানতে চাইলেন “হুজুর!কি বললেন”? জবাবে মুর্শিদ বললেন আমি আমার কাজ করে দিয়েছি সময় হলে এর ফল তুমি পেয়ে যাবে। এখন তুমি বাড়ি ফিরে যাও, তোমার পিতা ও মাতার আদেশ অনুযায়ী কাজ করবে। তাঁর পীর ও মুর্শিদ তাঁকে আজানগাছী গ্রামের মাওলানা বলে সন্মধন করেছিলেন। সেজন্য তিনি বাড়ি ফিরে গিয়ে তাঁর নিজের নাম মিটিয়ে দিয়ে গ্রামের নামে পরিচিত লাভ করেছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পরে তিনি সর্বদা অস্তির থাকতেন। কোন কাজে তাঁর মন বসতো না, আর না খাওয়া দাওয়াতে। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কারো সাথে কথা বলতেন না। এই অবস্থা দেখে তাঁর পরিবারবর্গ তাঁকে একজন নেককার মেয়ে দেখে বিবাহ দেন। যাতে আগের মত ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু কোন লাভ হইনি। কিছু দিন পরে তাঁর স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তাঁর ভালোবাসা ও তাঁকে কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। দুনিয়াদারী থেকে তাঁর মন সরতে থাকে। কোনও ভাবে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। এবাদাত করতে পছন্দ করতেন। সর্বদা তিনি আল্লাহ্র ধ্যনে মগ্ন থাকতেন ও বেশির ভাগ সময় মুজাহিদা, মুরাকাবা, মুশাহিদা করে কাটাতেন।
শেষ পর্যন্ত তাঁর মনের বাসনা পুরন না হওয়ার জন্য দুনিয়ার ভালোবাসার মোহ ত্যাগ করে ২৫ বছর বয়সে তিনি সূফীর রাস্তায় চলতে শুরু করেন। বিভিন্ন তরীকার শাইখ ও বুজুর্গের খিদমত করতেন ও ইলমে মারেফতের জ্ঞান ও কামেলিয়ত অর্জন করার জন্য তিনি আরও বিভিন্ন জায়গায় তিনি সফর করেছিলেন। পরে তিনি ফরজ হজ্জ আদায়ের উদ্দেশে তিনি রওনা দিয়েছিলেন। হজ্জ করার পরে অনেক দিন পর্যন্ত খানায়ে কাবা ও মদীনা শরীফের কাছে থেকে এবাদাত, রিয়াজাত এবং মুজাহিদা ও মুরাকাবা মশগুল ছিলেন। ওখনেই তিনি হজরত মাওলানা হাজী শাহ সূফী দীন মহাম্মাদ মাক্কী আরজি সাদেকী হাসায়েনী ও হোসায়েনী (রহঃ) (মোয়াল্লেম হেরেম শারীফ) এর কাছে বায়াত গ্রহন করেন। তাঁর কাছে থেকে খিরকাহ্ ও খিলাফাত লাভ করেছিলেন। সেখানে থেকে পীর ও মুর্শিদের হুকুম নিয়ে অন্য জায়গায় সফর করলেন ও সেখানের কামেল ওলীর কাছে থেকে খিদমত ও সহবত অর্জন করলেন। এমন করে তিনি তাঁর ইচ্ছা পূরন করার উদ্দেশে এক মুর্শিদের হুকুম নিয়ে অন্য মুর্শিদের খিদমত করে তাঁর কাছে থেকে তাসাওয়ুফের সাথে ইলমে বাতেনীর জ্ঞান অর্জন করেছেন। এমন করে তিনি সমস্ত কামেল মুর্শিদের কাছে থেকে খিরকাহ্ ও খিলাফত এবং ইজাজাত পেয়েছিলেন। তাঁহার মুর্শিদগণের মধ্যে নিয়ে কয়েকজনের নাম দেওয়া হইল যাহাদের কাছ থেকে তিনি খেলাফত্ পেয়েছিলেন।
১। হজরত শাহ সূফী হাফেজ হাজী এমদাদ উল্লাহ মোহাজেরে মক্কী আল ফারুকী (রহঃ)(ইমাম এমদাদীয়া তরীক্বা)
২। হজরত শাহ সূফী ফজলুর রহমান গঞ্জে মোরাদাবাদী (রহঃ) (নকশেবন্দীয়া তরীক্বা)
৩। হজরত শেখ শাহ সূফী মাওলানা হাজী দীন মোহাম্মাদ মক্কী আরজি সাদিক আল্ হাসায়েনী হুসাইনী (রহঃ)(মোজাদ্দেদীয়া তরীক্বা)
৪। হজরত শেখ শাহ সূফী মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মাদ গাজী (রহঃ) (চিশতীয়া তরীক্বা)
৫। হজরত শেখ শাহ সূফী মাওলানা ওবেদ উল্লাহ (রহঃ) এই দুইজন মুর্শিদ হজরত মাওলানা সূফী সাবাদী আখুঞ্জি/সবাদ অখুন্দ (রহঃ)এর মুরিদ ও খাদেম ছিলেন। এইভাবে তিনজনের মাজার ওখানেই দাফন করা হয় “গাঞ্জে শাহিদ” তে।
৬। হজরত শেখ শাহ সূফী খন্দোকার খোদাবক্শ মিয়া (রহঃ) (কাদেরীয়া তরীক্বা)
৭। হজরত শেখ শাহ সূফী মাওলানা খন্দোকার খুদী মিয়া (রহঃ) (কাদেরীয়া তরীক্বা)
৮। হজরত শেখ শাহ সূফী মাওলানা খোন্দকার মনছুর আহাম্মেদ (রহঃ) (কাদেরীয়া তরীক্বা)
তিনি এই সমস্ত ওলী আল্লহর খিলাফাত লাভ করার পরে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার সুঁড়ির জঙ্গলে দীর্ঘ ১৪ বছর পর্যন্ত কঠিন সাধনা করেছেন। বর্তমানে ওই জঙ্গল জনবাসতিতে পরিপূর্ণ বাগমারী নামে পরিচিত। ওখানেই তাঁর মাজার মোবারক অবস্হিত।
এই ১৪ বছর জঙ্গলে তিনি দিনে রোযা ও রাতে এবাদাতে ইলাহির মশগুল থাকতেন। আল্লাহ্র ধ্যানে এমন ভাবে তিনি মশগুল থাকতেন যে একমুঠো ছোলাতে সেহেরী ও নীম পাতার পানি দিয়ে ইফতারী করে তিনি তাঁর নফসকে দমন করতেন। কোন এক ব্যাক্তি বলেন, ওখানেই তিনি খিজির (আঃ) এর সাথে মোলাকাত হয়েছিল। জঙ্গলে থাকার জন্য তিনি সপ্তাহে একবার জুম্মার দিনে বাহির হতেন। জুম্মার নামাজ আদায় করে তিনি এবার ফিরে আসতেন। এমন ভাবে তিনি আল্লাহ্র ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজেকে বিলীন করে দিলেন। কেও একজন সত্য বলেছেন-
“আহলে ওফা কে নাম কি হাস্তী সে নাঙ্গ হো
লৌহে মাজার ভি মেরী ছাতী পে সাঙ্গ হো”
অর্থ- আল্লাহর ওলীর জন্য নিজের নামের অস্তিত্ব লজ্জাজনক,
কবরের নামফলকও বক্ষের উপর প্রস্তরসম।
চৌদ্দ বছর জঙ্গলের জীবন শেষ হওয়ার পরে যখন তিন লোকালয়ে এলেন হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) বাস্তবতায় তিনি ওয়ারিসে নবুওয়াত হয়ে আত্ম প্রকাশ করলেন। অবিভাবক হয়ে তিনি প্রকাশ করলেন। হেদায়েতের আলো হয়েই তিনি প্রকাশ হলেন। ফানা ফিল্লাহ ও বাকা বিল্লাহর উচ্চ স্থানে পৌঁছে সত্য পথ প্রদর্শক হয়ে ইসলামের পক্ত কামেল নেতা হয়ে ফিরে এসে দাওয়াতে তাবলীগের কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পরে তিনি আবার কলকাতা ফিরে এসে কলাবাগান জামে মসজিদে প্রতি জুম্মার নামাজ আদায় করতে যেতেন ওখানেই তিনি দাওয়াতে তাবলীগ করতেন। হজরত মাওলানা আজানগাছী (রহঃ) ইসলামের দাওয়াতের সাথে নামাজ, ওজিফা, হালাল রুজি, সুদ ও হারাম খাদ্যের,তাকওয়া পরহেজগারীর ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তা বায়েন করতেন। সুদের নিষেধাজ্ঞা, ভয়াবহতা ও পাপের থেকে লোককে সবধান করতেন। এজন্য কিছু লোক তাঁকে পছন্দ করতেন না রেগে থাকতেন। এজন্য কিছু দিন রাজাবাজারের কাছে একটি ছোট ঘর ভাঁড়া নিয়ে থাকতেন। একদিনের ঘটনা, তিনি লোকেদের হাক্কানী ওজিফা শেখাচ্ছিলেন এমন সময় দুই ব্যক্তি “বুদা ও পেরু” মদের নেশায় আসক্ত হয়ে এসে হুজুর কেবলার মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিলেন। রক্ত বাহির হয়ে জখম হয়ে গেল। হুজুর কেবলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের কামরাতে প্রবেশ করলো ও সিজদাতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করে দোওয়া করতে লাগলো “ইয়া আল্লাহ!” আপনি আমাকে ক্ষমা করো ও এই দুই ব্যক্তিকে ক্ষমা করো যারা আমাকে মেরেছে। এরা আমাকে জানেনা ঠিক ওই সময় বাড়ির মালিক ছুটে এসে মদ্যকার দুই ব্যক্তির ধরে নিয়ে হুজুর কেবলার কাছে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন ও জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি এই ফকিরের মেরেছো? এই দেখ! এই ফকীর তোমাদের জন্য দোয়া করছে। তোমরা ক্ষমা চেয়ে নাও। তারা দুজন ঘর মালিকের কথা শুনে ক্ষমার উদ্দেশে হজরতের কাছে গেলেন ও তিনি তাদেরকে মাফ করে দিলেন। পরবর্তীতে তারা দুই জন বিশেষ মুরিদ ও দরবারের খাদেম হয়ে গেলেন। এই কথা যখন শহরে ছড়ালো ততক্ষণাৎ শহরের গুন্ডা ও বদমাশগুলি হজরতের কাছে এসে তওবা করে নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও ওজিফা পড়তে শুরু করলো। হালাল খাদ্য অন্বেষণ করতে লাগলো ও পাক্কা মুরিদ হয়ে গেল।
হজরত মাওলানা সূফী মূফতী আজানগাছী জীবনী ।life of hajrat maolna sufi azangachi
হাক্কানী ওজিফা
“ওজিফা” এটি একটি সুপরিচিত আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ-প্রতিনিয়ত ধর্মশাস্ত্র পাঠকরা। “হাক্কানী ওজিফা” এটি হজরত মাওলানা সূফী আজানগাছী (রহঃ) তাঁর সাধনাকালে হজরত খিজির (আঃ) এর সাক্ষাৎ লাভে এই ওজিফা তিনি পান। এর মধ্যে কোরআন কারিমের চারটি বিশেষ সূরা দেওয়া আছে, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস এই চারটি সূরার বিশেষ গুন আছে। কোরআন এর প্রতিটি সূরার এক একটি গুন আছে, তিনি তাঁর এই ওজিফাতে বিশেষ চারটি সূরা দিয়ে সকল মুসলিম উম্মাহকে আমল করার উপদেশ দেন। এর মধ্যে একটি “ দরুদ” আছে যেটি “হাক্কানী দরুদ” নামে পরিচিত। এবং সর্বশেষে একটি ছয় কথার মোনাজাত দেওয়া আছে। এটি এমন কোনো ওজিফা নয়, যেটি পড়লে অন্য কোন আমল করা যায়না। এই ওজিফার একটি বিশেষ গুন হচ্ছে এটি খুব অল্প সময় পড়ে অধিক আমলের অধিকারী হওয়া যায়। যারা হাক্কানী ওজিফাকে অবজ্ঞা করবে তারা কোরআন কেই অবজ্ঞা করল। কেননা কোরআন কারিমে আসেছে, তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ইমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে তারা লাঞ্চিত হবে এবং পরবর্তীতে তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সুতরাং হাক্কানী ওজিফাকে অস্বিকার করলে কোরআনের ২২ টি আয়াতের অস্বিকার করা হয়। হাক্কানী ওজিফা এটি একটি কোরআনী ওজিফা, কেননা এতে কোরআনের সূরা বর্তমান। হাক্কানী ওজিফা আমলকারী দের জন্য কোরআন সুপারিশ করবে, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তাঁর পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবেন। এই মহা কোরআনী ওজিফা হাক্কানী আঞ্জুমানের অনুসারীগন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ও পরে আমল করে অধিক পরিমান আমলের অধিকারী হয়ে থাকেন।
একবারের ঘটনা জনাব আব্দুল হামিদ সাহেব (বাংলার গর্ভ) হাক্কানী ওজীফা এবং উরসেকুলের ব্যপারে জানার জন্য মিশরে গেলেন। ঠিক কি ভুল খোঁজ নেওয়ার জন্য কায়েরোর প্রধান অধ্যাপকের সাথে মোলাকাত করলেন এবং হাক্কানী ওজিফার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন তিনি নিজেই হাক্কানী ওজিফা পড়েন এবং তাঁর উপর আমল করেন।
একই সময় তিনি মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে নামাজের ওয়াক্তে পৌঁছালেন। নামাজের শেষে তিনি দেখলেন অনেক লোক হাক্কানী ওজিফা পড়তে শুরু করলেন। পরে তিনি ফিরে এসে বিশ্বাস করে নিলেন আলহামদুলিল্লাহ্ হাক্কানী ওজিফা সঠিক ও এর উপর আমল করা প্রয়োজন।
বিনা পয়সায় দ্বীন দুনিয়ার শান্তি ও মঙ্গল
হাক্কানী আঞ্জুমানের ওজিফা
ওজিফা পড়িবার নিয়মঃ-প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে বা পূর্বে ওজুর সহিত আল্লাহ তায়ালার দিকে মন রুজু করিয়া নিম্নলিখিত ওজিফা পরিবেন।প্রথম দিন ওজিফা আরম্ভ করিবার পূর্বে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়িয়া লইবেন।
ওজিফাঃ-আউজবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহের সহিত সুরা ফাতেহা,আমিন পর্যন্ত একবার।বিস্মিল্লাহের সহিত ‘এখলাস’ তিন বার, ‘সুরা ফালাক’এক বার, ‘সুরা নাস’এক বার।পরে হাক্কানী দরূদ শারীফ তিন বার। পড়িয়া নিম্ন লিখিত মোনাজাত করিবেন।(সমায় বুঝিয়া বিজোড় ভাবে আপনি যত বার ইচ্ছা আমল করিতে পারেন)।
ওজিফার উপকারিতাঃ-এই ওজিফা অন্যান্য প্রচালিত ওজিফা সমুহের সার,নিতান্ত সহজ ও সংক্ষিপ্ত বলিয়া সকলেই ইহা আমল করিতে পারেন। ইহা পড়িতে অল্প সময় লাগে অথচ কেবল পাঁচ ওয়াক্তের ওজিফায় সওয়া আট খাতম কোরআন শারীফের জিল্লী সওয়াব হাসিল করা যায়।হক পথে থাকিয়া নিয়মিত আমল করিলে আল্লাহ তায়ালার ফাজলে দ্বীন দুনিয়ার সর্বপ্রকার শান্তি ও মঙ্গল হয় ও রুহানি তরক্কী লাভ হয়,আল্লাহ তায়ালা ও রসুল(সাঃ)এবং ওলি আল্লাহগণের প্রতি ইশক,মোহাব্বত,এতেকাদ,ও ভক্তি বৃদ্ধি পায়। স্বাপ্ন যোগে আম্বিয়া আওলিয়ার দর্শন লাভ হয়।মানব,জ্বিন,এর যাবতীয় অনিষ্ট ও যাদু টোনা হইতে নিরাপদ থাকা যায়।ধন জন মানের উন্নতি, রুজি রোজগারে বরকত ও ঋণ পরিশোধের উপায় হয়।প্রকাশ থাকে যে, যাঁহারা অন্যত্র মুরিদ আছে তাঁহারও এই ওজিফা পড়িতে পারেন।তার জন্য তাহাদিগকে সাবেগ পীর বা ওজিফা পরিত্যাগ করিতে হইবে না।
হাক্কানী দরূদ শারীফঃ-আল্লাহুম্মা সাল্লে অসাল্লেম অ বারেক আলা আব্দেকার রাসুলিল কারিম রাহমাতাল্লিল আলামিন শাফিয়েল মুজনেবিন সাইয়েদেনা মাওলানা নাবিয়েনা মহাম্মদেদেঁও অ আলা আলেহি অ আহলে বায়তিহি অ আওলাদিহি অ জুরিয়াতিহি অ আজওয়াজিহি অ আসহাবিহি আওলীয়ায়েহি অ উম্মাতেহি আজমাইন কামাসাল্লায়তা অ সাল্লামতা অ বারেকতা অ রাহেমতা আলা সাইয়েদেনা ইব্রাহিমা অ আলা আলে সাইয়েদেনা ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
মোনাজাতঃ- এলাহী রাহমত জিয়াদা কর তামাম আলমের উপর। এলাহী রাহমত জিয়াদা হাজরত মাওলানা সুফী মুফতী আজানগাছী (রহঃ)সাহেবের উপর।এলাহী রাহমত জিয়াদা কর আলেফারুকীর উপর। এলাহী রহমত জিয়াদা কর আস্তানা আজানগাছী ফারুকি মাঞ্জিলের উপর।এলাহী রহমত জিয়াদা কর আমার উপর এবং যাঁহারা এই ওজিফা পড়েন তাঁহাদের উপর আমীন। এই মোনাজাতের পর ইচ্ছা হলে আন্য মোনাজাতও করতে পারেন।