ওলীআল্লাহদের প্রয়োজন ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসের আলোকে।
ওলীআল্লাহ্র দের সাথে আল্লাহ্ ও তার রসূলদের খুব ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে থাকে। কেননা যতক্ষণ আল্লাহ্র হুকুম ও তার রসূল (সঃ) সুন্নাতের উপর পুরপুরি আমল না করবে সে মুমিন হতে পারেনা। আর যতক্ষণ সে মুমিন কামেল হবে সে ওলীআল্লাহ্ হতে পারেনা।
অতঃপর বেলায়েতের উপর যতক্ষণ না পর্যন্ত খুশু ও মহাব্বাত, ফুক্র ও কেনায়াত, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল, সবর ও তাহম্মুল, শাফকাত ও পিয়ার, জুদ সাখা, জিকির ও ফিকির, হিলম ও বুরদবারি, তাবাজি ও খুকশারি, কুরবানি ও জানেসারি তৈরি হয়, ততক্ষণ সে ওলী কামেল হতে পারেনা। যে ওলী আল্লাহ্র মধ্যে এই সব বিশেষগুন মৌজুদ থাকে এবং ওলী আল্লাহ্র সহবত থাকে তিনি তখন ওলীয়ে কামেল হয়ে যায়। আর যখন ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহর উচু দরজা নসিব হয়ে যায় এবং সেই দরজায় কোন ফকির অথবা কোন দরবেশ পৌঁছে যায়, তখন সেই রুহানিয়াত হাসিল করা সত্য মুর্শিদ মুস্তজাবুদাওয়াত হয়ে যায়।কেননা এই সমস্ত গুণগুলি নবী ও রসূলদের মধ্যে যখন অর্জন হয়ে যেত তখন তাদের উপর নবুয়াত, হিদায়েতর ও উম্মাতদের রক্ষনাবেক্ষন করার দায়িত্ব দেওয়া হত। এই কাজগুলি করার সমায় যে কতগুলি নবী (আঃ) শাহাদাত বরণ করেছেন তা আল্লাহ্ তায়ালা ভালো জানেন। নিজের উম্মাতের কাছে থেকে রসূল (সঃ) যে কত কষ্ট, লাঞ্ছনা পেয়েছেন কিন্তু বদদোওয়া করার সমায় তিনি মুখ বন্ধ করে রাখতেন। সবসমায় উম্মাতের হিদায়েতের জন্য তিনি চিন্তা এবং দোওয়া করতে ব্যাস্ত থাকতেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, উলামায়ে হাক্কানী ও ওলী আল্লাহগণ আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) দের দেখানো পথে তারা অনুসরণ করেন। তাদের সাথে থাকলে যেমন রুহানিয়াত ও সুন্দর চরিত্র হাসিল হয় ঠিক তেমনি দাওয়াতে তাবলীগ ও হিদায়েতের কাজ প্রচুর পরিমানে হয়। ওলামায়ে হাক্কানীদের মতে, ইলম ও আমল অর্জনের রাস্তা নবুয়াতের এই সিলসিলাহ কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। ইনশাআল্লাহ্
আল্লাহ্ তায়ালা মানব জাতির সৃষ্টির পর হিদায়ত ও গুমরাহীর জন্য দুটি দরজা খুলে দিয়েছেন। এবং তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনাতা দিয়েছেন। মানব জাতির হিদায়েতের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা নবী, রসূল, সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, হাক্কানী আলেম এবং ওলী আল্লাহদের নিয়োগ করেছেন ও গুমরাহীর জন্য শায়তান মারদূদ কে পয়দা করেছেন।
একদিকে আল্লাহ্র হুকুম পালনকারী দল (হিজবুল্লাহ) এবং ওপরদিকে শায়তানের অনুসরণকারী দল (হিজবুস শায়তান)।
একদিকে আল্লহর হুকুম পালণকারীদের মধ্যে নবী, রসূল, সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, হাক্কানী আলেম, ওলী আল্লাহ্ ও মোমেনীন ও সলেহীনদের দল (হিজবুল্লাহ)। শায়তানের আনুসরণকারীদের মধ্যে ফেরাউন, নমরুদ, হামান, সাদ্দাদ, কারুন ও কাফেরীন, মুশরেকীনদের দল (হিজবুস শায়তান)। আল্লাহ ও রসূল (সঃ) এর উপর ইমান ও বিশ্বাস রাখে যারা মোমিন জান্নাতি ও অস্বীকার কারীগন কাফের, মুশরিকগন জাহান্নামী। ইমান ও বিশ্বাসে যে যত কামেল ইমানদার, মুত্তাকী, পরহেজগার ও নামাজ, রোজায় অটুট থাকতে পারবে, আল্লাহ্র কাছে সে তত সন্মানিত হবে। আল্লাহ্র সাথে নাফরমানী করে যে কুফর, শিরক, চুরি, ডাকাতি, ফেতনা, ফাসাদ, জুলুমকারী, আমানত খেয়ানতকারী, সুদখোর, ঘুষখোর, মদখোর হক্বের পথে না থেকে বাতিলের পথে, আল্লাহ্ কে ছেড়ে মূর্তি পূজায় উপস্থিত থাকবে, সে ততবড় শায়তানের হুকুম পালনকারী হবে, ও তার সাজা স্বারুপ জাহান্নামের আগুন নসীব হবে। কোরআন কারীমে আল্লাহ্তায়ালা বলেছেনঃ
ٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُخْرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَوْلِيَآؤُهُمُ ٱلطَّـٰغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ ٱلنُّورِ إِلَى ٱلظُّلُمَـٰتِ ۗ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
(সূরা বাকারা পারা-৩,আয়াত-২৫৭)
উচ্চারণ - আল্লা-হু ওয়ালি ইয়ূল্লাযীনা আ-মানূ ইউখরিজুহুম মিনাজ্ জুলুমা-তি ইলান নূরি ওয়াল্লাযীনা কাফারু আওলিয়া উহুমুত্তা-গুতু ইউখরিজূনাহুম মিনান নূরি ইলাজ জুলুমা-তি উলাইকা আসহা-বুন্না-রি হুম ফীহা-খা-লিদূ ন।
অর্থ- আল্লাহ্ তাদের পৃষ্ঠপোষক যারা ঈমান এনেছে, তিনি অন্ধকার থেকে তাদের আলোতে বের করে আনেন। আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে তাগুত, তারা আলোক থেকে তাদের বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তারাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা, তারা তাতে থাকবে দীর্ঘকাল।
কোরআন কারীমের অন্য জায়গায় আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَمَاتُوا۟ وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ ٱلْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ ٱفْتَدَىٰ بِهِۦٓ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ
(সূরা আলে ইমরান পারা-৩,আয়াত-৯১)
উচ্চারণ – ইন্নাল্ লাযীনা কাফারু ওয়ামা-তূওয়া হুম কুফফা-রুন ফালাইঁ ইউকবালা মিন আহাদিহিম মিলউল আরদি যাহাবাওঁ ওয়ালা বিফতাদা-বিহী উলাইকা লাহুম ‘আযা-বুন আলীমুওঁ ওয়ামা-লাহুম মিন না-সিরীন।
অর্থ- নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে আর মারা যায় তারা অবিশ্বাসী থাকা অবস্থায়, তা হলে তাদের কোনো একজনের কাছ থেকে পৃথিবী ভরা সোনাও গ্রহণ করা হবে না, যদি সে তাই দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। এদের জন্য ব্যথাদায়ক শাস্তি রয়েছে, আর এদের থাকবে না কোনো সাহায্যকারী। যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম পালনকারী হয়, তা আল্লাহ্র কাছে আল্লাহ্র অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে। কেননা আল্লাহ্র কাছে দ্বীন বলতে একমাত্র ইসলাম গ্রহণযোগ্য অন্য কোন ধর্ম নয়। কোরআন কারীমে এসেছেঃ
وَمَن يَّبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِين
(সূরা আলে ইমরান পারা-৩,আয়াত-৮৫)
উচ্চারণ- ওয়া মাই ইয়াবতাগি গাইরাল ইসলা-মি দীনান ফালাই ইউকবালা মিনহু ওয়া হুওয়া ফিল আ-খিরাতি মিনাল খা-সিরীন।
অর্থ- আর যে কেউ ইসলাম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম অনুসরণ করে তা হলে তার কাছ থেকে কখনো তা কবুল করা হবে না। আর শেষ পর্যন্ত সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
কোরআন কারীমে অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনঃ
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَـٰمُ ۗ
(সূরা আলে ইমরান পারা-৩,আয়াত-১৯)
উচ্চারণ- ইন্নাদ্ দীনা ‘ইনদাল্লা-হিল ইসলা-মু।
অর্থ- নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।
যেসব বান্দা আল্লাহ্র ও রসূল (সঃ) এর হুকুমের পথ অনুসরণ করবে তারা তাদের সাথে থাকবে। যাদের আল্লহ তায়ালা পুরস্কৃত করেছেন নবীঈন, সিদ্দিকীন, শোহাদা, সলেহীন আর তারাই ভালো বন্ধু ও আল্লাহ্ তায়ালার হুকুম জানার জন্য তারাই যথেষ্ট।
যেমন আল্লাহ্ তায়ালা কোরআন কারীমে বলেছেনঃ
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُو۟لَئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّلِحِينَ وَحَسُنَ أُو۟لَٰٓئِكَ رَفِيقًا * ذٰلِكَ ٱلْفَضْلُ مِنَ ٱللَّهِ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ عَلِيمًا
(সূরা নিশা পারা-৪,আয়াত-৬৯,৭০)
উচ্চারণ- ওয়া মাইঁ ইউতি ইল্লা-হা ওয়াররাসুলা ফাউলাইকা মা‘আল্লাযীনা আন আমাল্লা-হু আলাইহিম মিনান্নাবিইয়ীনা ওয়াসসিদ্দীকীনা ওয়াশ শুহাদাই ওয়াসসা-লিহীনা ওয়াহাসুনা উলাইকা রাফীকা-। যা-লিকাল ফাদলুমিনাল্লা-হি ওয়াকাফা-বিল্লা-হি আলীমা-।
অর্থ- আর আমরা নিশ্চয়ই তাদের পরিচালিত করতাম সহজ সঠিক পথে। আর যে কেউ আল্লাহ্র ও রসূলের আজ্ঞাপালন করে, এরাই তবে রয়েছে তাঁদের সঙ্গে যাঁদের উপরে আল্লাহ্ নিয়ামত প্রদান করেছেন নবীগণের মধ্য থেকে, ও সত্যপরায়ণদের ও সাক্ষ্যদাতাদের এবং সৎকর্মীদের, আর এরা হচ্ছেন সর্বাঙ্গ সুন্দর বন্ধুবর্গ। ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিজেদের সতর্কতামূলক সাজ সরাম নাও, তারপর ভিন্ন ভিন্ন দল হয়ে বেরিয়ে পড়ো অথবা এগিয়ে চলো দলবদ্ধভাবে।
এখানে নবীগন, সিদ্দীক, শোহাদা, সলেহীনগন বান্দাদের কথা এসেছে। সলেহীন বান্দা কে? যে সত্য কামেল মোমিন, যে নিজের খেয়ালাত ও আকায়েদ, নিয়েত ও ইরাদা, আক্বওয়াল ও আফআলের উপর সর্বদা জাহেরী ও বাতেনী কাজের উপর অটুট থাকে এবং অন্যদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে। তাঁর রুহানিয়াতে অনেক সন্মান এবং আল্লাহ তায়ালার থেকে শরিয়ত,তরিক্বত,হাকিক্বত,মারেফতের খবর রাখে। একদিকে তারা ইলমে জাহেরী ও অন্য দিকে ইলমে বাতেনীর খবর রাখে। আর অন্যদের জন্য তারা সাহায্যকারী বন্ধু হয়, তাঁরই ওলী আল্লাহ্ হয়ে থাকেন। সাহাবাদের সমায়কাল থেকে আজ পর্যন্ত ও কিয়ামত পর্যন্ত তারা থাকবেন।
ওলীদের বহুবচন কে আওলিয়া বলা হয়। ওলী মানে বন্ধু, নিকটবর্তী, ওই কামেল মুমিনের অনুসরন করবে যার দুনিয়া ও আখেরাতের উপকারী প্রমাণ হয়। ওলী শব্দ নূর ও জুলমাত, হিদায়েত ও গুমরাহী, ইমান ও কুফর দুইয়ের জন্যই লাফজী ও মআনবী লেহাজে ব্যাবহার করা হয়। যেমন-
اَوْلِيَاءُالّٰلهُ اور اولِيَاألطّاغُوتِ وَالشَّيْطَانْ
আওলিয়া আল্লাহ্ ও আওলিয়াত তাগুতি ওশ-শায়তান, এর মধ্যে পার্থক্য এই যে ইস্তেলাহী মানে আওলিয়াগন আসলে আল্লাহ্র নেক বান্দা ও সালেহীন মুমেনিন কে বলা হয়। যখন কোন মোমিন ও মুসলিম আওলিয়ার জিকির করে, তখন তাঁর চিন্তা ও ভাবনাই শয়তানের বন্ধু ও অনুসরনকারী হয়না, কিন্তু আল্লাহর অনুসরণকারী মুত্তাকী ,পরহেজগার, হিদায়েতের উপর চলা ব্যক্তি ও গুমরাহীর থেকে হিদায়েতের রাস্তা ও সঠিক পথের দিশা দেখানো ব্যক্তি হয়ে থাকে। আর ওই সঠিক পথ –সূরা ফাতিহা তে এসেছে সিরাতে মুস্তাকীমের উপর চলা ব্যক্তি, সিরাতে মোস্তাকীম কোথায়? ওই সোজা রাস্তা কোথায় আছে? যে রাস্তা আল্লহর কাছে পৌঁছে দেয়, তাঁর উপর আল্লাহ্ খুশি হয়ে যায়। আগের আয়াত থেকে জানা যায় যে কোন লোকদের রাস্তা সোজা, আল্লাহ্ তাদের উপর খুশি হয়ে তাদের পুরস্কৃত করে।
কোরআন কারীমের আয়াতঃ
*ٱهْدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا ٱلضَّآلِّين
(সূরা ফাতিহা পারা-১,আয়াত ৬,৭)
উচ্চারণ – ইহদিনাস সিরা-তাল মুসতাকীম। সিরা-তাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম ।
আমাদের সঠিক পথ দেখান এবং ওই পথে চালান। যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। কারা ওই ব্যক্তি যাদের আল্লাহ্ তায়ালা পুরস্কৃত করেছেন। সূরা নিশার ৬৯ নং আয়াতে বর্ণনা দিয়েছেন, সূরা ফাতিহার ৭নং আয়াতে বলেছেঃ
উচ্চারণ- গইরিল মাগদূ বি আলাইহিম ওলাদ্ব-ল্লিন।
অর্থাৎ ওই লোকেদের রাস্তা ওলীদের রাস্তা, কখনই না যাদের উপর আল্লহর আযাব দিয়েছেন এবং তারা গুমরাহী হয়েছেন। বরং ওলী আল্লাহ্র রাস্তা, আল্লাহ ও রসূল (সঃ), সাহাবী ও তাবেঈন দের অনুগত্তকারী হয়। যাদের উপর ইমান ও একীন, কামেল এর সাথে, এখলাস ও মহাব্বাত এর সাথে, দুঃখ, সুখ, রাগ, নির্জনতা ও জামায়াত যে কোন সমায় যে কোন মুহূর্তে প্রতিষ্ঠিত ও স্থির থাকে। তাদের ইমান ও স্থায়িত্ব এতটা অটুট যেকোনো কেউ তাদের নড়াতে পারবেনা। তারা সর্বদা আল্লাহ্র হুকুম ও ইচ্ছা অনুযায়ী আমলে সলেহার উপর ও আল্লাহ্র জিকিরে মশগুল হয়ে থাকে। তাদের ওই সব দুনিয়াবি ধনসম্পদ আল্লাহ্র রাস্তায় দান করার জন্য প্রস্তুত রাখে। শয়তানী কুমন্ত্রণা তাদের উপর কোন রকম প্রভাব বিস্তার করেনা। আল্লাহ তায়ালা তাদের নিরাপদ রাখেন এবং তারা নিজে থেকে সদাসর্বদা সতর্ক থাকে। তাদের নিকট থাকা মুরিদদের শক্তি, ক্ষমতা ও নফস্ নিয়ন্ত্রন রাখার উপায় তারা বলে দেন। কোরআন কারিমে ওই সমস্ত ওলী আল্লাহদের জন্য সুখবর দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে বলেছেনঃ
أَلَآ إِنَّ أَوْلِيَآءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ * الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ * لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
(পারা ১১ সুরা-ইউনুস,আয়াত-৬২,৬৩,৬৪)
উচ্চারণ- আলাইন্না আওলিয়াআল্লা-হি লা-খাওফুন আলাইহিম, ওয়ালা-হুম ইয়াহঝানূন। আল্-লাযীনা আমানু ওয়াকানু ইয়াত্তাকূন। লাহুমুল বুশরা-ফিল হায়া-তিদ দুনইয়া-ওয়াফিল আ-খিরাতি লা-তাবদীলা লিকালিমা তিল্লা-হি যা-লিকা হুওয়াল ফাওজুল আজীম।
অর্থ- শুনে নাও! নিশ্চয় আল্লাহ্র ওলীগণের না কোন ভয় আছে, না কোন দুঃখ; ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং খোদাভীতি অবলম্বন করে; তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে। আল্লাহ্র বাণীগুলো পরিবর্তিত হতে পারে না। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য।
ওই সকল ওলীআল্লহ “উলিল আমর” হয়, যাদের কথা কোরআন কারীমে এসেছে।
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَـٰزَعْتُمْ فِى شَىْءٍۢ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْـَٔاخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
(পারা ৫ সূরা-নিসা,আয়াত-৫৯)
উচ্চারণ-ইয়া আইয়ুহাল্ লাযীনা আ-মানূ আতী উল্লা-হা ওয়া আতী ‘উররাসুলা-ওয়া উলিল আমরি মিনকুম ফাইন তানা-যা‘তুম ফী শাইইন ফারুদ্দূহু ইলাল্লা-হি ওয়ার রাসুলি ইন কুনতুম তু’মিনূনা বিল্লা-হি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরি যা-লিকা খাইরুওঁ ওয়া আহসানু তা’বিলা।
অর্থ- হে ইমানদারগন ! তোমরা আল্লহর হুকুম পালন কর ও রসূলের অনুসরণ কর, আর তোমাদের মধ্যে যারা সাহবে হুকুম (উলিল আমর), কেননা আয়াতের শুরুতে আল্লাহ্ তায়ালার জিকির ও রসূল পাক (সঃ) এর সাথে উলিল আমর এর কথা বলা হয়েছে। উলিল আমর অর্থ যারা পুরোপুরি আল্লহর ও রসূল পাক (সঃ) এর হুকুম পালনকারী হয়, তাঁরাই ওলীআল্লাহ।
কোরআন কারীমে অন্য এক আয়াতে এসেছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
(পারা ৬,সুরা-মায়েদা,আয়াত-৩৫)
উচ্চারণ- ইয়া আইয়ূহাল্ লাযীনা আ-মানুত তাকুল্লা-হা ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াসিলাতা ওয়া জাহিদূ ফী সাবীলিহী লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।
অর্থ- হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তারই দিকে মাধ্যম তালাশ করো এবং তার পথে জিহাদ করো এই আশায় যে, সফলতা পেতে পারো। এই আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালার মারেফাত লাভ করার জন্য হুকুম করেছেন ও ওসিলা তালাস কর, ওসিলা জ্ঞানের মাধ্যম হতে পারে, আমলের মাধ্যম হতে পারে, নসিহতের মাধ্যম হতে পারে, ওলী আল্লাহ্র মজলিসে বসার মাধ্যম হতে পারে এবং ওলী আল্লাহ্র বলা শুদ্ধ তরীকার উপর আমল করার মাধ্যম হতে পারে। যে কোন মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু মারেফাতে ইলাহীর মাধ্যম একমাত্র ওলী আল্লাহ্।
এইমর্মে আমি মনে করি যে কামেল ওলীদের কথা, প্রয়োজন ও ফজিলাত সম্পর্কে যেমন কোরআন কারীমে যেমন উল্লেখ আছে তেমনি বিভিন্ন হাদীস শারীফ দ্বারা ও প্রমানিত, যার মধ্যে থেকে আমি অল্প কিছু সংখ্যক কিছু হাদীস উল্লেখ করছি।
ওলী আল্লাহ এবং সালেহীনদের স্থান ও সন্মান
১)ওলী আল্লাহর সাথে দুশমানী করলে আল্লাহ্র সাথে যুদ্ধ ঘোষণা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْب،ِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَ، عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْه،ِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِه،ِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّه،ُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ
(সাহিহ বোখারী ও ইবনে হিব্বান)
উচ্চারন- আন আবী হুরাইরাতা রাদিয়াল্লাহু আনহু, আন্নাহু ক্বল, ক্বলা রসূল উল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ইন্নালাহু ক্বল, মান আদালী অলিয়ান ফাকাদ আযান্ তুহুবিল হারবি, ওমা তাকাররবা ইলায়ত, আব্দি বিসাইয়িন, আহাব্বা ইলাইয়া মিম্মাফ তারাদতু আলাইহি। ওমা ইয়াযালু আব্দি ইয়াতাকাররাবু ইলাইয়া বিন্নায়াফিলি হাত্তা উহিব্বাহু ফায়িজা আহবাবতুহু কুন্তু সামআহুল লাযি ইয়ুবসিরু বিহি, ওইয়াদাহুল লাতি ইয়াবতিসু বিহা, ওরিযলাহুল লাতি ইয়ামসি বিহা, অইন্সা আলানি লা ইয়ুতিয়ান্নাহু, ওলাইন আস্তা আযানি লায়ুয়িযান্নাহু, ওমা তারাদ্দাদতু আনশাইন আনাফা ইলুহু তারাদ্দুদি আন নাফসিল মুমিনি ইয়াক্রাহুল মাউতা ওয়ানা আক্রাহু মসায়াতাহু।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে আমার ওলীর সাথে দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরয করেছি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করেনি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে অবশেষে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি আমি তার কানে পরিণত যা দ্বারা সে শ্রবণ করে। তার চোখে পরিণত হই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যা দ্বারা সে হাঁটে। যদি সে আমার নিকট চায় আমি তাকে অবশ্যই দিব, যদি সে আমার নিকট পানাহ্ চায় আমি তাকে অবশ্যই পানাহ দিব। আমার করণীয় কোন কাজে আমি দ্বিধা করি না যেমন দ্বিধা করি মুমিনের নফসের সময়, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্টকে অপছন্দ করি”।
২) ওলী আল্লহর চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জালিত হবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ " أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَلِجُ الْجَنَّةَ صُورَتُهُمْ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، لاَ يَبْصُقُونَ فِيهَا وَلاَ يَمْتَخِطُونَ وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ، آنِيَتُهُمْ فِيهَا الذَّهَبُ، أَمْشَاطُهُمْ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَمَجَامِرُهُمُ الأَلُوَّةُ، وَرَشْحُهُمُ الْمِسْكُ، وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ، يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ، مِنَ الْحُسْنِ، لاَ اخْتِلاَفَ بَيْنَهُمْ وَلاَ تَبَاغُضَ، قُلُوبُهُمْ قَلْبٌ وَاحِدٌ، يُسَبِّحُونَ اللَّهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
(বোখারী, মুসলিম, হিব্বান, তিরমিযী শারীফ)
উচ্চারণ- আন আবু হুরাইরাতা রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বলা, ক্বলা রসূল উল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, আওয়ালু যুমরাতি তালিজুল জান্নাতা সুউরাতা তুহুম আলা সুউরাতিল কমারতি লাইলাতাল বাদরি লা ইয়াবছুকুনা ফিহা ওলা ইয়ামতাখিতুনা, ওলা ইয়াত্তা খওঅতুনা আনিয়াতুহুম ফি হাজ্জাহাবু, আমসাতুহুম মিনাজ্জাহাবি ওল ফিদ্দাতি ওমা যামিরুহুমূল মিস্কু অলিকুল্লি অহিদিম মিনহুম যাওজাতানি ইয়ুরআ মুক্ষা সুউকিহিমা মিউ অরায়িল লাহমি মিনাল হুসনি, লা ইয়াখ তিলাফা বায়নাহুম ওলা তাবাগুদান, কুলুবুহুম ক্বল্ বুন অহিদুন ইয়াসাব্বিহুনাল লাহা বুকরাতাউ অয়াস্ সিয়ান।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মও বের হবে না। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিস্কের মত সুগন্ধযুক্ত। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। তারা দুজন করে স্ত্রী পাবে, যাদের সৌন্দর্যের দরুন গোশ্ত ভেদ করে পায়ের নালার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের কোন মতভেদ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে, তারা সকাল-সন্ধায় তাসবিহ্ পাঠে রত থাকবে।
৩) বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে যারা
عَنْ ثَوْبَانْـ رضى الله عنه قَلَ سَمِعْتُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَقُوْلُ اِنَّ رَبِّيْ عَزَّ وَجَلَّ وَعَدَنِيْ مِنْ اُمَّتِيْ سَبْعِيْنَ اَلْفَآلًايُحَاسَبُوْنَ مَعَ كُلِّ اَلْفٍ سَبْعُنوْنَ اَلْفًا
(তিবরানি)
উচ্চারণ-আন ছাউবান রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বলা, সামিতু রসূল উল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম, ইয়াকুলু ইন্না রাব্বি আয অযাল্লা অ-য়াদানি মিন উম্মাতি সাবয়িনা আল ফালান ইউহাসিবুনা মায়া কুল্লি আলফিন সাবয়ুনা আলফান।
সাউবান (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি রসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই আল্লাহ্ আমাকে ওয়াদা করেছেন, সত্তর হাজার উম্মাতদের বিনা হিসাবে আল্লাহ্ তায়ালা জান্নাত দান করবেন ও তাদের প্রতি হাজারে আরও সত্তর হাজার উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে (তিবরানি আসনাদ হাসানের সাথে বর্ণনা করেছেন)।
৪) কিয়ামতের দিন ওলী আল্লাহ দের নুরের তৈরি মিম্বারে বসানে হবে।
عَنْ اَبِيْ اَمامَتَ رضى الله عنه قَلَ، قَلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ،اِنَّ لِلّٰهِ عِبَادًايُجُلِسُهُمْ اَللّٰهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰيْ مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍوَّيَغْشَيٰ وُجُوْحُحُمْ النُّرُحَتَّيٰ يَفْرُغٰ مِنْحِسَابِ الْخَلَاءِقٍ
(তিবরানি)
উচ্চারণ- আন আবি আমামাতা রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বলা, ক্বলা রসূল উল্লাহি সাল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ইন্নালাহি ইবাদান ইয়ুজিলুসু হুমুলল্লাহি ইয়াউমাল কিয়ামাতি আলা মানাবারি মিন নুরিউ অ ইয়াগসায়া উজুহু হুমউন নুরু হাত্তা উয়াফ্রুগা মিন হিসাবিল খালায়িকিন।
হজরত আবু ওমামা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালার কিছু বান্দাদের এমন হবে যাদের কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তায়ালা নুরের তৈরি মিম্বারে বসাবেন এবং তাদের চেহারা দিয়ে নূর চমকাবে। এমনকি আল্লাহ্ তায়ালা তাদের হিসাব থেকে দূরে রাখবেন।
৫)ওলী আল্লাহ্র পরিচয়
عَنْ اَسْمَاءِبِنْتِ يَزِيْدٍ رَدِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَلَتْ سَمِعْتُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَقُوْلُ اَلَا اُنَبِّءُكُمْ بِخِيَارِ كُمْ قَلُوْا بَلَيٰ يَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، قَلَ خِيَارُ كُمْ اَلّٰذِيْنَ اِذَا رُؤُوْا ذُكِرَاللّٰهُ عَزَّ وَ جَلَّ
(আহমদ,ইবনে মাজাহ,বোখারী শরীফ)
উচ্চারণ- আন আসমা বিন্তে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু,ক্বলাত সামিতু রসূলুল্লাহি সাল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, ইয়াকুলু আলা আনাব্বিয়ুকুম বিখিয়ারিকুম কলু বালা ইয়া রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ক্বলা খিয়ারুকুম আল্লাজিনা ইযা রুয়ু জুকিরাল্লাহু আজ্জা ও জাল্লা।
হজরত ইয়াজিদ (রাঃ)(বিন্তে আসমা) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যে সবথেকে ভালো লোকের সন্ধান দিবনা? সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ইয়া রসুল(সঃ) কেননা? রসূল(সঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে সব থেকে ভালো ব্যাক্তি তিনি যাকে দেখলে আল্লাহ্র কথা স্বরণ এসে যায়।
৬) যাকে দেখলে আল্লাহ্র মনে পড়ে যায় সেই ওলী আল্লাহ
عَنْ اِبْنِ عَبَّسٍ رَدِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَلَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺعَنْ اَوْلِيَاءِاَللّٰهِ فَقَالَ،اَلَّذِيْنَ اِذَارُؤُوْا ذُكِرَاللّٰهُ عَزَّوَجَلَّ
(নাশাঈ শরীফ)
উচ্চারণ- আন ইবনে আব্বাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ক্বলা সায়িলা রসূল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, আন আওলিয়ায়িল্লাহি ফাক্বলা, আল্ লাযীনা ইযা রুয়ু যুকিরা আল্লাহু আজ্জা ও জাল্লা।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল (সঃ) কাছে ওলী আল্লাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে হুজুর পাক (সঃ) বলেছেন, ওই ব্যাক্তি ওলী আল্লাহ্ যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্বরন হয়।
৭)ওলী আল্লাহ্র ও আরেফবিল্লাহর অন্তর সর্বদা তাকওয়া দ্বারা পূর্ণ থাকে
عَنْ عُمَارَ ابَنِ الْخَطَّابِ رَدِيَ اللّٰهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، اَنَّهٗ قَالَ اِنَّ لِكُلِّ شَىءٍ مَعْدَ نًا وَمَعْدَنُ التَّقْويٰ قُلُوْبُ الْعَارِفِيْنَ
(তাবরানি, বাইহাকি শরীফ)
উচ্চারণ- আন উমারা ইবনে খাত্তাবি (রাঃ) আনিন্ নাবিয়ি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ইন্নাহু ক্বলা ইন্না লা কুল্লি সাইয়িন মায়দা নান অমাআ দানুত তাকওয়া কুলুবুল আরিফিন।
হজরত ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল পাক (সঃ) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি জিনিসের মধ্যে কোন না কোন গুপ্তধন থাকে। এবং তাকওয়ার গুপ্তধন আরেফিনদের অন্তরে থাকে।
৮)মুত্তাকী পহেজগারদের আল্লাহ্ তায়ালা ভালোবাসেন
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِيْ وَقَّصً رَدِيَ اللّٰهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَقُوْلُ اِنِّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْعَبْدَالتَّقِوَّ الْغَنِيَّ الْخَفِيَّ
(মুসলিম শরীফ,আহমদ)
উচ্চারণ- আন সাদ ইবনে আবি অক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, ক্বলা সামিতু রসুলুল্লাহি সল্লাহু আলিহি ও সল্লাম, ইয়াকুলু ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল আব্দাত তাকিইয়াল গানিয়াল খফিয়া।
হজরত সাদ ইবনে আবি অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূল পাক (সঃ) কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর ওই বান্দাদের ভালবাসেন, যারা মুত্তাকী ও পরহেজগার হয়। আমাদের পীর ও মুরিদের অবস্থান একই রকম।
৯)ফেরেশতারা আল্লাহ্র জিকিরকারীগন কে খুজতে থাকে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ
(বোখারী,নাসাঈ শরীফ ও ইমাম মালেক(রঃ) বর্ণনা করেছেন)
উচ্চারণ- আন আবি হুরাইরাতা রাদিয়াল্লাহু আনহু, আন্না রসূলউল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম,ক্বলা ইতাআ কাবুনা ফিকুম মালায়িকাতু বিল লাইলি ও মালায়িকাতু বিন্নাহারি ওয়াইয়াজ তামিয়ুনা ফি সলাতিল ফাযরি ও সলাতিল আসরি ছুম্মা ইয়ারুজুল্ লাজিনা বাতু ফিকুম ফায়াসআ লুহুম অহুয়া আলামু বিহিম কাইফা তারাক্তুম ইবাদি? ফায়াকুলুনা তারাকনাহুম অহুম ইউছল্লুনা অয়াতাইনা হুম অহুম ইউছল্লুনা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রাত ও দিনে ফেরেশতাগণ পালাক্রমে তোমাদের নিকট আগমন করে এবং ফযর ও আসরের সময় তারা একত্রিত হয়। তারপর যে সকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট ছিল, তারা উপরে উঠে যায়, আল্লাহ্ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি সর্বজ্ঞ, আমার বান্দাদের তোমরা কি অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলে থাকে, আমরা যখন চলে আসি তখন আপনার বান্দারা (ফযরের) সালাত আদায় করছিল। আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখন তারা (আসরের) সালাত আদায় করছি। এই হাদীসের আলকে হাক্কনী আঞ্জুমান দরবারে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধায়, ফযর ও আসরের নামাজের পরে জিকিরে মাশগুল হয়ে যায়। আর এই আমলের তালিকা ফেরেশতাগণ আল্লহর কাছে পেশ করে। আজানগাছী (রহঃ) এই তরীকা যে সমস্ত পীরভাইগন পেয়েছে, তারা নেকির পাহাড় তৈরি করে নিচ্ছে।
১০) জাকেরীন ও সালেহীন বান্দাদের পরিচয়
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَقُوْلُ اللّٰهُ عَزَّوَجَلَّ اَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِىْ بِيْ وَاَنَا مَعْهٗ حِيْنَ يَذْكُرُنِيْ
(মুসলিম, তিরমিজি, নাশাঈ, ইবনে মাজাহ শারীফ)
উচ্চারন- আন আবি হুরাইরাতা রাদিয়াল্লাহু আনহু, ক্বলা ক্বলা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম ইয়াকুলুল্লাহি আজ্জ ও যাল্লা আনা ইন্দা জান্নি আব্দি বি অয়ানা মায়াহু হিনা ইয়াজকুরুনি।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল পাক (সঃ) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, আমি আমার বান্দাদের অনুমান অনুযায়ী হয়। তারা আমার থেকে যা আসা করে। আর আমি তাদের সাথে থাকি যখন তারা আমার জিকির করে। এই হাদীসের কিছু অংশ পরিবর্তন করে ইমাম বোখারি (রহঃ) বর্ণনা করেছন।
১১) কোন মাসয়ালা জানার জন্য ওলী আল্লাহ্ ও সালেহীনদের কাছে জিজ্ঞাসা করা
عَنْ اَبِيْ اَلْفِرَاسِيْ،اَنَّ الْفِرَسِيْ رضى الله عنه قَالَ لِرَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ اَسْئَالُ يَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ،قَالَ لَاوَاِنْ كُنْتُ سَائِلًا لَابُدَّ فَاسَئَلِ الصَالِحِيْنَ
(আবু দাউদ, আহমদ, নাসাঈ শরীফ)
উচ্চারন- আন আবিল ফিরাসি, আন্নাল ফিরাসি রাদিয়াল্লাহু আনহু, ক্বলা লিরসূলিল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, আসআলু ইয়া রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ক্বলা লা অইন কুন্তু সায়িলান লা বুদ্দা ফাসয়ালি সলিহীনা।
হজরত ইবনে (রাঃ)(ফিরাসির পুত্র) থেকে বর্ণিত, তার পিতা হজরত ফিরাসি (রাঃ) রসূল পাক (সঃ)এর কাছে বলেন, ইয়া রসুল (সঃ) আমি লোকেদের কাছে প্রশ্ন করতে পারি? রসূল (সঃ) বলেন, না। যদি প্রশ্ন করা জরুরি হয়ে থাকে তাহলে শুধুমাত্র সালেহীনদের থেকে জিজ্ঞাসা করবে (কেননা তারা তোমাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সঃ) এর আদেশ অনুযায়ী জবাব দেবে ইনশাআল্লাহ।
১২) ওলী আল্লাহ্র থেকে কোন বিষয়ে উপদেশ গ্রহন করা রসূল পাক (সঃ) এর হুকুমের অনুসরণ করা হয়
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِاللّٰهِ الثَّقَفِيْ رضى الله عنه قَالَ لَمَّا بَعَثَ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ مَعَاذَآِلٰي الْيَمَنِ قَالَ يَامُعَذُ، بِمَ تَقْضِيْ؟قَالَ اَقْضِيْ بِكِتَابِ اللّٰهِ،قَالَ فَاِنْ جَاءَكَ اَمْرٌ لَيْسَ فِيْ كِتَابِ اللٰهِ وَلَمْ يَقْضِ فِيْهِ نَبِيُّهٗ وَلَمْ يَقْضِ فِيْهِ الصَّالِحُوْنَ قَالَ اَئُوْمُّ الْحَقَّ جَهْدِيْ قَالَ: رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ اَلْحَمْدُلِلّٰهِ اَلَّذِيْ جَعَلَ رَسُولَ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ يَقْضِ بِمَا يَرْضَيٰ بِهِ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ
(তিরমিজি,আবু দাউদ,আহমদ শারীফ)
উচ্চারণ- আন মুহাম্মাদ বিন আব্দিল্লাহিস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু, কলা লাম্মা বায়াছা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, মায়াজা ইলাল ইয়ামিনি ক্বলা ইয়া মুয়াজ বিমা তাকদি? ক্বলা আকদি বি কিতাবিল্লাহি ক্বলা, ফায়িন যায়াকা আমরুন লাইসা ফি কিতাবিল্লাহি অলাম ইয়াকদি ফিহি নাবিয়ুহু অলাম ইয়াকদি ফিহিস সলিহুনা ক্বলা আউম্মুল হাক্কা যাহদি ক্বলা ফাক্বলা রসুলুল্লাহি সল্লালাহু আলাইহি ও সল্লাম আলহামদু লিল্লা হিল্লাজি যায়ালা রসূলা রসুলিল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম, ইয়াকদি বিমা ইয়ারদা বিহি রসুলুল্লাহি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (রাঃ) কে যখন ইয়ামনের শাসনকর্তা নিয়োগ করে প্রেরণের ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন। তোমার কাছে যখন কোন মোকদ্দমা পেশ করা হবে, তখন তুমি কিরূপে তার ফয়সালা করবে? তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র কিতাব অনুসারে ফয়সালা করবো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি আল্লাহ্র কিতাবে এর কোন সমাধান না পাও? তখন মুআয (রাঃ) বলেন, তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করেন, যদি তুমি রাসূলের সুন্নাতে এবং আল্লাহ্র কিতাবে এর কোন ফয়সালা না পাও? তখন তিনি বলেনঃ এমতাবস্থায় আমি চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে ইজতিহাদ করবো এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ শৈথিল্য করবো না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআযের বুকে হাত মেরে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূতকে এরূপ তাওফীক দিয়েছেন, যাতে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্ট অনুযায়ী বিচার করতে পারে।
১৩) জান্নাতিদের জন্য সবথেকে বড় নিয়ামত হবে আল্লহর সাক্ষাৎ লাভ
عَنْ صُهَيْبٍ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ " إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ- قَالَ - يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ فَيَقُولُونَ أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ - قَالَ - فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ
(মুসলিম ও আহমদ শরীফ)
উচ্চারন- আন সুহাইবিন রাদিয়াল্লাহু আনহু, আনিন নাবীয়ি সল্লাহু আলাইহি ও সল্লাম ক্বলা, ইযা দাখালা আহলুল জান্নাতি ক্বলা ইয়াকুলুল্লাহি তাবারকা ও তায়ালা তুরিদুয়ুনা শাইয়ান আজিদুকুম? ফায়াকুলুনা আলাম তাবাইয়িদু ইয়ুজুহানা? আলাম তুদখিলনাল জান্নাতা অতুনাজ্জিনা মিনান নার? কলা ফায়াসিফুল হিযাবা ফামা য়ুতু সাইয়ান আহাব্বা ইলাইহিম মিনান নাজারি ইলা রব্বিহিম।
হজরত সুহাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেন, যখন জান্নাতের যোগ্যরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন ধন্য ও মহামানবরা জিজ্ঞেস করবে: তুমি কি চাও আমি তোমাকে আরো কিছু দেব? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করনি? আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং আগুন থেকে রক্ষা করেননি? এর থেকে বেশি আমাদের আর কি দরকার। আমারা এগুলির শুকর আদায়ের যোগ্যতা রাখিনা। রসূল(সঃ) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর চেহারা থেকে পর্দা উঠিয়ে দেবেন, এবং তারা আল্লহর সন্নিধ্য লাভ করবে, তাদের কাছে তাদের রব, পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিতের চেয়ে প্রিয় কিছুই হবে না।
১৪) নাম বিহীন মুত্তাকীরা আল্লাহ তায়ালার বন্ধু হয়
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضى الله عنه عن مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ : " إِنَّ يَسِيرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ ، وَإِنَّ مَنْ عَادَى لِلَّهِ وَلِيًّا ، فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ ، إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْأَبْرَارَ الْأَتْقِيَاءَ الْأَخْفِيَاءَ ، الَّذِينَ إِذَا غَابُوا لَمْ يُفْتَقَدُوا ، وَإِنْ حَضَرُوا لَمْ يُدْعَوْا ، وَلَمْ يُعْرَفُوا قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى ، يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ
উচ্চারন- আন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু, আন মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বলা সামিতু রসুলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, ইয়াকুলু ইন্না ইয়াসিরার রিয়ায়ি সিরকুন অইন্না মিন আদালিল্লাহি অলিয়ান, ফাকদ বারাযাল্লাহা বিল মুহারাবাতি ইন্নালাহা ইহিব্বুল ইব্রারাল আতকিয়াল আখফিয়া আল্ লাজিনা ইজা গবুলাম উফতাকাদু অইন হাদারু লাম ইয়ুদাইয়াও অলাম ইয়ারাফু কুলুবুহুম মাসাবিহুল হুদায়া ইয়াখ্ রুজুনা মিন কুল্লি গাবারতিন মুজলিমাতিন।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হজরত মুয়াজ(রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সামান্যতম কপটতাও শিরক। যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন বন্ধুর (ওলী) সাথে শত্রুতা করলো, সে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। নিশ্চয় আল্লাহ ভালোবাসেন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহভীরু আত্মগোপনকারী বান্দাদের, যারা দৃষ্টির অন্তরাল হলে কেউ তাদের খোঁজ করে না, সামনে উপস্থিত থাকলে কেউ তাদের আপ্যায়ন করে না এবং তাদের পরিচয়ও নেয় না। তাদের অন্তরসমূহ হেদায়াতের আলোকবর্তিকা। তারা সব ধরনের অন্ধকারাচ্ছন্ন কদর্যতা থেকে নিরাপদে বের হয়ে যাবে।
১৫) এহসানের বর্ণনা
عَن عُمَر رضي الله عنه أَيْضًا قال: "بَيْنَما نَحْنُ جُلْوسٌ عِنْدَ رسُولِ الله ﷺ إذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَياضِ الثِّيَاِب شَديدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لا يُرَى عليه أَثَرُ السَّفَرِ ولا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتى جَلَسَ إلى النَّبِّي ﷺ، فأسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إلى رُكْبَتَيْهِ ووَضَعَ كَفَّيْهِ على فَخِذَيْهِ، وقال: يا محمَّدُ أَخْبرني عَن الإسلامِ، فقالَ رسُولُ الله ﷺ: الإسلامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لا إلهَ إلا اللهُ وأَنَّ محمِّدًا رسولُ الله، وتُقِيمَ الصَّلاةَ، وتُؤتيَ الزَّكاةَ، وتَصُومَ رَمَضان، وتَحُجَّ الْبَيْتَ إن اسْتَطَعتَ إليه سَبيلًا. قالَ صَدَقْتَ. فَعَجِبْنا لهُ يَسْأَلُهُ ويُصَدِّقُهُ، قال: فَأَخْبرني عن الإِيمان، قال: أَن تُؤمِنَ باللهِ، وملائِكَتِهِ وكُتُبِهِ، ورسُلِهِ، واليَوْمِ الآخِرِ، وتُؤمِنَ بالْقَدَرِ خَيْرِهِ وشَرِّهِ، قال: صدقت؛ قال: فأخْبرني عَنِ الإحْسانِ. قال: أنْ تَعْبُدَ الله كَأَنَّكَ تَرَاهُ فإنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فإنَّهُ يَرَاك، قال: فأَخبرني عَنِ السَّاعةِ، قال: ما المَسْؤولُ عنها بأَعْلَمَ من السَّائِلِ، قال: فأخبرني عَنْ أَمَارَتِها، قال: أن تَلِدَ الأمَةُ رَبَّتَها، وأَنْ تَرَى الحُفاةَ العُراةَ العالَةَ رِعاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُون في الْبُنْيانِ، ثُمَّ انْطَلَقَ، فَلَبثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قال: يا عُمَرُ، أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟ قُلْتُ: اللهُ ورسُولُهُ أَعلَمُ، قال: فإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ
উচ্চারণ- আন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু, ক্বলা বাইনামা নাহনু ইনদা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, ইয তালায়া আলাইনা রজলুন সাদিদু বায়াদিস সায়াবি সাদিদু সয়াদিস সায়রি লায়ুরা আলাহি আসারুস সাফারি ওলা ইয়ারিফুহু মান্না আহাদুন জালাসা ইলান্নাবি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, ফায়াস্নাদা রুকবাতাহি ইলা রুকবাতইহি অয়াদায়া কাফফাহি আলা ফাখিযাইহি অক্বলা ইয়া মুহাম্মাদ সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম আখবারনি আনিল ইসলাম, ফাক্বলা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম আল ইসলামু আন তাশহাদা আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু অইন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম, অ তুকিমাস সালাতা অতুতিয়ার যাকাতা ও সয়ুমা রমাদানা, অতাহুজ্জাল বাইতা ইনিস্তাতায়তা ইলাইহি সাবিলান, ক্বলা সদাক্তা, ক্বলা ফায়াযিবনা লাহু ইয়াসালাহু ও ইয়ুসাদ্দিকুহু! ক্বলা, ফায়াখবিরনি আনিল ইমান, ক্বলা তুমিনা বিল্লাহ, অমালায়িকাতিহি, অরসুলিহি, অইয়াউমাল আখিরি, অ তুমিনাবিল কদরি খইরিহি, ক্বলা সদাক্তা ক্বলা, ফায়াখবিরনি আনিল ইস্লাম, ক্বলা ইন তাবুদাল্লাহা কান্নাকা তারাহু, ফাইনলাম তাকুন তারাহু ফাইন্নাহু ইয়ারকা, ক্বলা ফাইখবিরনি আনিস সায়াতি, ক্বল মাল মাসআলু আনহা বিয়ালামা মিনাস সায়িলি, ক্বলা ফায়াখবিরনি আন আমারাতিহা?ক্বলা ইন তারিদাল উম্মাতু রব্বাতাহা, অইন তারা হুফাতাল য়ুরাতা রিয়ায়াসাতি ইয়াতাতা ওলুনা ফিল বাইনি সুম্মান তালাকা, ফালাবিস্তু মিলাইয়ান, ছুম্মা ক্বলা, ইয়া উমারু আতাদুরি মিনাস সায়িলু? কুলতু, আল্লাহু ও রসুলুহু আয়লামু ক্বলা, ফাইন্নাহু জিব্রিইলু আতাকুম উল্লিমুকুম দিনুকুম। (কিছু অংশ পরিবর্তন করে মুসলিম শরীফ এ বর্ণিত আছে।
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন: “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমযানে সওম(রোজা) সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”।সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করবে”।
তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম, “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন, “তিনি হলেন জিব্রাইল (আঃ)।তিনি তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।
১৬) উপাসনা করার সময় আল্লাহ্র দিকে ধ্যান দেওয়া
عَنْ اَنْسَ بْنُ مَالِكِ رضي الله عنه قَالَ:قَالَ رسُولِ الله ﷺ اَلْاِحْسَانُ اَنْ تَعْمَلَ لِلّٰهِ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
উচ্চারন- আন আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বলা, ক্বলা রসূলুল্লাহি সল্লাহু আলায়হি ও সল্লাম আল ইহসানু আন তায়মালা লিল্লাহি কায়ান্নাকা তারাহু ফায়িন লাম তাকুন তারাহু ফায়িন্নাহু ইয়ারাকা।
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, হুজুর পাক (সঃ) বলেছেন, এহসান ওই জিনিস যে, তুমি এমন ভাবে আল্লাহ্র এবাদাত কর যেন আল্লাহ্ তায়ালা কে তুমি দেখছো। যদি তা নসীব না হয় এমন মনে করো যেন আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে দেখছে।
এই হাদীসের আলকে এই রকম বুজুর্গগন অনেকে পর্দা নিয়েছেন ও এখন এই সময় হাক্কানী আঞ্জুমানে কামেল ওলীগন ও সাচ্চা মুরিদ ও মুখলেসীন গনের উপস্থিত আছেন। যাদের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুনিয়াতে তাসাওয়ুফ ও রুহানিয়াতের দরজা হাসিল করার জন্য অনেক কঠিন রিয়াজাত, মুজাহিদা, মুরাকাবাহ, বিনা কাযায় রোজা ও নামাজ কায়েম করা, তাকওয়া খুশু ও খুজু, আল্লাহ্র ভয় ও রসূল পাক (সঃ) এর ভালোবাসা দরকার হয়। যে বান্দা এর উপর আমল করে, দুনিয়ার ভালোবাসা ত্যাগ করে কামিলিয়ত হাসিল করে। সেই ইমামুল মুসলিমিন হয়ে যায়। খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম, হজরত আলী(রাঃ) মাধ্যমে হজরত ইমাম হাসান ও হোসাঈন(রাঃ), হজরত কুমল বিন জায়েদ ও হজরত হাসান বাসরী (রহঃ) গন এই শিক্ষা অর্জন করেছিলেন।
এরপর এই সিলসিলাহ কুফার আবু হাশিম মাক্কী(রহঃ),হজরত হাসান বসরীর (রহঃ) এর কাছে থেকে জাবের বিন হাসান, হজরত আব্দুল বাহিদ বিন জায়েদ আল বাসরী, হজরত আবুল ফজল ফুযোল বিন ওয়াজ, বালখের হজরত ইব্রাহিম বিন আধহাম, হজরত রাবেয়া বাসরী, খুরাসানের হজরত মারুফ কারখী, হজরত হাবীব আজমী্, হজরত দাউদ তাঈ, হজরত হারিস মহাসিবী, হজরত আওয়েস করনী, হজরত মালেক বিন দিনার (রহঃ) পর্যন্ত চলেছে।
অতঃপর তৃতীয় শতাব্দী হিজরি থেকে হজরত সওবান বিন ইব্রাহিম, হজরত জুননুন মিসরি (রহঃ) তাসাওফের জ্ঞান অর্জন করেছেন। অন্য দিক থেকে হজরত অহলোল দানা ও বাগদাদের আবু তারিক জুনাইদ বাগদাদী তাসাওফের শিক্ষায় ইমাম হয়ে গেলেন। উনার পর হজরত আবু বক্কার শিবলী, হজরত আবু আলী শাকিক বালখী, হজরত হাতেম আসাম বালখী, খুরাসানের হজরত আবুল হাসান নুরী, হজরত বাসার হাফী, বালখের ইয়াহইয়া মোয়াজ, হজরত সররী সাকতী, হজরত সাহাল বিন আব্দুল্লাহ তাস্তারী (রহঃ) পর্যন্ত চলে। অতঃপর পারস্যের বায়াজিদ আল বস্তামী অর্থাৎ ইয়াজিদ বস্তামী ওই যুগের তাসাওফের ইমাম ছিল। হজরত মুনসুর হাল্লাজের সমসামায়িক হজরত আবু বক্কার আল কালাব্দি, হজরত আবু আব্দুর রাহমান সুলারী, হজরত আবু তালিব মাক্কী (রহঃ) যেই সুফিগন পর্দা নিয়েছেন, পরের যুগে হজরত আবু বক্কার সিরাজ, হজরত আবুল কাশেম আল কুরেশী। হজরত আবুল হাসান মাখদুম হাজীরী (রহঃ)অনেক কিতাব লিখেছেন। পরে হজরত আবু হামিদ মহাম্মাদ বিন মহাম্মাদ আল গাজ্জালী (রহঃ) (ইমাম গাজ্জালী) অনেক কিতাব লিখেছেন, এবং ইসলামের মধ্যে যে তাসাওফের যে ভুল ধারনাকে সংশোধন করেছেন ও তাসাওয়ুফ ইসলামের বাহিরে না, তাসাওয়ুফের ও প্রয়োজন আছে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।
একই যুগে হজরত শাহাবুদ্দিন সহরবন্দী, হজরত শাইখ আব্দুল কাদের জিলানী (গউসুল আজম), হজরত নাজিমুদ্দিন কুবরা, হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরী, হজরত ফরিদউদ্দিন আত্তার (রহঃ) ইসলামের সঠিক তবলীগ করেছেন। ওই সময় জালালদ্দিন রুমী (রহঃ)এর প্রকাশ পায়। যিনি শামস তাবরেজী (রহঃ)এর থেকে ইলমে তাসাওয়ুফ অর্জন করে, রুহানিয়তের ভালো জিন্দাগী গঠন করে। তিনি তাঁর জ্ঞান ও বিবেকার দ্বারা উচ্চ পর্যায়ের কিতাব “মাসনাবী শরীফ” লিখেছন। ওই যুগে ছিলেন হজরত ফাকরুদ্দিন ইরাকী, মিশরের ইবনুল ফারিজ, ইরানের সাদউদ্দিন মহাম্মাদ শাবস্তারী, হজরত আব্দুল কারীম বিন ইব্রাহিম আলজলী, হজরত আল্লামা নূরউদ্দিন আব্দুর রহমান জামী (রহঃ) যেমন জালিলুল কদর উলামা ও সুফিয়া, তেমনি সারা পৃথিবীতে বহু কিতাব লিখে উপাস্থাপন করেছেন। পরবর্তী যুগে বুখারার হজরত সূফী বাহাউদ্দিন নাকশাবন্দী এবং সিরহিন্দ পাঞ্জাবের হজরত আহমদ ফারুক মুজাদ্দিদ আলফেসানী (রহঃ) তাসাওফের তালীম দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। এবং “মাকতুবাতে সাদী ও মাকতুবাতে দো সাদী” কিতাব লিখেছেন, তারপর সাহস দেখানোর জন্য কেউ আসেনি। তখন ও মুসলিমদের পতনের সময় হজরত শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলবী, হজরত আল্লামা জামালউদ্দিন আফগানী, আল্লামা মহাম্মাদ ইকবাল তারা ইসলাম ও তাসাওয়ুফের ভুল ব্যাখ্যা রোধ করার করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। হজরত হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজের মাক্কী আল ফারুকী (রহঃ), মুসলিমদের সফলতার জন্য জিহাদের হুকুম দেন এবং পুরো দুনিয়ায় খবর পৌঁছায় মুসলমানদের রুহানিয়তের মাধ্যমে দোজাহানের সফলতা ও আল্লাহ্ ও রসূল পাক (সঃ) এর দিকে ডেকেছিলেন। একই সিলসিলাহ পরম্পরায় চোদ্দ হিজরীতে মুসলিম মিল্লাতের জন্য প্রকৃত সহানুভূতিশীল জামানের মোজাদ্দেদ হয়ে হজরত মাওলানা সূফী মুফতী আজানগাছী(রহঃ) এর আবির্ভাব হয়।
নিঃসন্দেহে কোরআন মাজীদের আয়াতে এক আল্লাহ্র সাথে দোজাহানে ফানী ও বাকীর দুনিয়ায় পথ প্রদর্শক হিসাবে সাদীক ও আমীন রাহমাতাল্লিল আলামীন হাককী রুহানী রাহবারে কামেল, পায়গম্বারে আহকামে খোদায়ে কাহহার ও জব্বার, রহমান ও রহিম, ফারমায়ে জাতে বারী তায়ালা কে সাথ মামুর, আসমানী সবচেয়ে উচ্চ কিতাব কোরআন মাজীদ এর সাথে মাজীদে মোকাদ্দাস, মহাতারাম, মুয়াজ্জাজ ও মুমতাজ কারদা নাবী, আখরুজ্জামা খতামে পায়গম্বার মখাফফারে মউজুদাত বাইসে তাখলিকে কাইনা, আকায়ে নামদার মাদানী তাজদার শাফীয়েল মুজনিবিন, সাইয়েদুল মুরসালীন জনাবে আহমদ মুজতবা মহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ) যার নূর দ্বারা কায়েনাত সৃষ্টি, তাঁর পর্দা নেওয়ার পরে শারিয়াতের আইন হিসাবে কোরআন কারীম ও হাদিস শরীফ। এবং হিদায়েতের তালীম দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আহমায়ে মুজতাহেদীন, ইমামে তারীকত, গওস, কুতুব, আব্দালে সালেহীন, সুফীয়ায়ে এজাম ও আওলিয়ায়ে কামেলীন (রহঃ) এর পাক তালীম ও তারবিয়ত, হিদায়াত ও নসিহতের রাস্তা দেখানো ওয়ালা হয়ে, সমস্ত মানব জাতির জন্য ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য তাঁর বিশিষ্ট কাজের দ্বারা তালীম ও তারবিয়ত, সাইন্স ও টেকনোলোজি ,ইন্তেজাম ও ইসলাহাত, যুদ্ধ ও শান্তি, সুলহে ইনসানিয়ত, হামদারদী ও আখুব্বাত, সবর ও তাহাম্মুল, খুদ এতমাদী, সমাজি ইনসাফ, ইরতেকা রুহানিয়ত এবং তাকমীল ইনসানিয়তের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশ্বে চরমভাবে উচ্চ স্থান অর্জন করেছে।
সৌদি আরবের নিপীড়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে মুসলিমদের কালের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতা, কুফর ও শিরক, ও অন্য খোদার এবাদাত ও উপাসনা। এইসব পরিস্থিতির উদ্ধে গিয়ে সারা জগতে নূর ও মারেফাত, তাবলীগ ও হিদায়াতের জ্ঞানদান করার জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দিয়েছেন।
কিন্তু আফসোস! হায় আফসোস!
আজ ওই মুসলমান ভিন্ন ধারনা, আকিদা, ভগ্নাংশ তত্ত্বের মত মাজহাবের ফিরকা ও বিভিন্ন জামায়াতে ভাগাভাগি করে টুকরো টুকরো হয়ে গেছি। নিজেরা নিজেদের মধ্যে বড় শত্রু হয়ে, ফিতনা, মুনাফেকী, দ্বন্দ্ব, তর্কাতর্কি করা, যুদ্ধ লড়াই ইত্যাদি। এইসব প্রতিদিন চোখে পড়ে।এর ফল স্বরূপ সফলতার উচ্চ পর্যায় হাসিল হওয়ার বদলে, আজ আমরা মুসলমান এই স্থিতি থেকে অনেক দূর হয়ে অপমান আর অপদস্তের মধ্যে চরম ভবে আটকে গেছি। এই অজুহাতের সাথে ইসলামী জ্ঞান সল্পলতা, অসাধুতা, দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে আজ মুসলমানরা লোড়ে যাচ্ছে। নির্দেশনা এবং পেশার দ্বারা প্রাপ্ত, এটাই মুসলিমদের পতনের প্রধান কারন। প্রকৃত পক্ষে কিছু বিগড়ানো ও অসৎ বন্ধু করা বাক্তি নিজের পছন্দের ও নিজের মতের অনুসারী। একই রকম ভাবে কিছু ভ্রান্ত ও দুনিয়াদার মাজহাব অনুসারী দ্বীন এবং মাজহাবকে নিজের ব্যাবসার প্রধান হাতিয়ার করে নিয়ে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের লোক এক আল্লাহ্ ও তাঁর মনোনীত পছন্দনীয় ধর্ম ইসলামের ভুল বায়ান ও ব্যাখা করে চলেছে। তারা শুধুমাত্র বেমুখী ও অশিক্ষিত লোকেদের ধোকা দেয়না বরং তারা শিক্ষিত ও দ্বীনের উপর চলা ব্যাক্তিদের তাদের লাভবানের জন্য তাদেরকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই ধরনের ব্যাক্তিসব মাজহাবের এমন সব ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে এমন খারাপ অবস্থায় ছেড়েছেন। যে সাধারন মানুষের পক্ষে সমাধান বার করা প্রচুর কষ্টকর।
মুসলিম উম্মাতের এই ৭৩ ফেরকার জামানায় পথ প্রদর্শক হিসাবে মুখাফফারে ইসলাম, হাকিমে উম্মাত, মুর্শিদে বারহক্ব, মোজাদ্দেদে জামানার মীর, পীর, ফকীর, শারিয়তী, তরিকতী, হকিকতী, মারেফতী হজরত মাওলানা সূফী মূফতী আজানগাছী ফারুকী কাদেরী, চিশতী, নকশাবন্দী, মোজাদ্দেদী সাহেব (রহঃ) এর উপস্তিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।